উইকিপিডিয়া যেভাবে পরিচালিত হয় (পর্ব-১)

ইন্টারনেটের এই সময়ে বিভিন্ন তথ্যের প্রয়োজনে উইকিপিডিয়া ব্যবহার করেননি এমন ইন্টারনেট ব্যবহারকারী খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। কিন্তু এই তথ্য হয়ত অনেকেরই অজানা যে উইকিপিডিয়া পরিচালনা করে যুক্তরাষ্ট্রের অলাভজনক একটি সংস্থা যার নাম ‘উইকিমিডিয়া ফাউন্ডেশন’।

উইকিমিডিয়া ফাউন্ডেশনের ‘উইকিপিডিয়া’ ছাড়াও আরো বেশ কিছু এমন শিক্ষামূলক প্রকল্প রয়েছে। কিন্তু সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো, উইকিমিডিয়া ফাউন্ডেশন – ‘উইকিপিডিয়া’ ওয়েবসাইটটির মালিক হলেও এতে সব ধরনের তথ্য যুক্ত, হালনাগাদ বা সমৃদ্ধ করেন বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা অসংখ্য স্বেচ্ছাসেবী।

এই স্বেচ্ছাসেবী অবদানকারীগণই ঠিক করেন কোন আর্টিকেল কিভাবে যুক্ত হবে এবং কোন আর্টিকেলটি অপসারণযোগ্য। অর্থাৎ কনটেন্ট বিষয়ক সকল কাজই স্বেচ্ছাসেবকগণ করে থাকেন। উইকিমিডিয়া ফাউন্ডেশন, সংস্থা হিসেবে শুধু সাইটের প্রযুক্তিগত সহায়তা, সাইট পরিচালনায় অনুদান সংগ্রহ এবং সামগ্রিকভাবে সাইট সম্পর্কে সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। যদিও বিরল তবে আইনী প্রেক্ষাপটে সংস্থাটি নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে তাদের কোন ওয়েবসাইট থেকে আলোকচিত্র বা তথ্য মুছে ফেলতে পারে।

আরও পড়ুন: আপনিও হতে পারেন উইকিপিডিয়া অবদানকারী

উইকিপিডিয়ার যাত্রা শুরু হয় ২০০১ সালের ১৫ জানুয়ারি ইংরেজি সংস্করণের মাধ্যমে। ২০০৪ সালের ২৭ জানুয়ারি এর সাথে যুক্ত হয় বাংলা সংস্করণ যা ‘বাংলা উইকিপিডিয়া’ নামে পরিচিত। বর্তমানে উইকিপিডিয়া এমন ৩০০টির বেশি ভাষায় পড়া যায়। উইকিপিডিয়া কয়েকটি মূলনীতিতে পরিচালিত হয়। আর যাইহোক না কেন এ নীতিগুলোর সাথে আপোষ করা হয় না বললেই চলে। এর মধ্যে একটি হলো ‘নিরপেক্ষতা’। শুধুমাত্র এই একটি নীতি এখনো অনুসরণ করার ফলে ভুল তথ্য প্রবাহের এই সময়ে তথ্য নিয়ে কাজ করা ওপেনসোর্স এমন একটি প্রকল্প জনপ্রিয় ও বিশ্বাসযোগ্য হয়ে উঠতে পেরেছে।

উইকিপিডিয়াতে ভুল বা অনিরপেক্ষ তথ্য একেবারে যে নেই সেটাও অস্বীকার করা যাবে না। হ্যাঁ, আছে। কিন্তু বিষয়টি এভাবে একবার ভাবুন যে, সকল ভাষা মিলিয়ে কোটির উপর আর্টিকেল আছে এবং সেগুলো প্রতিনিয়ত যে কেউ হালনাগাদ করতে পারেন। এরকম একটি কর্মযজ্ঞে ১% বা ২% ঘটনা থাকাটাই স্বাভাবিক। আর এসব ঘটনা মূলত বিতর্কিত টপিকগুলোতেই বেশি হয়ে থাকে। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায় বিষয়গুলো মিনিটের মধ্যে নিষ্পত্তি হয়ে যায়।

আরও পড়ুন: বাংলা উইকিপিডিয়া – আসুন সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় একটি পূর্ণাঙ্গ বাংলা বিশ্বকোষ গড়ে তুলি

এই নিরপেক্ষতা নীতিটি উদাহরণ দিয়ে ব্যাখ্যা দেওয়া যেতে পারে। পৃথিবীতে আপনি আর একটিও ওয়েবসাইট খুঁজে পাবেন না যারা তাদের নিজেদের বিরুদ্ধে করা বিভিন্ন জনের সমালোচনামূলক লেখা নিজেদের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে প্রকাশ করেছে। এক্ষেত্রে উইকিপিডিয়াকে একমাত্র ওয়েবসাইট বলা যেতে পারে যেখানে উইকিপিডিয়াকে সমালোচনা করে বেশ কিছু স্বতন্ত্র আর্টিকল খোদ উইকিপিডিয়াতেই রয়েছে।

উইকিপিডিয়ার সমালোচনা’, ‘উইকিপিডিয়ার জেন্ডার পক্ষপাত’, ‘উইকিপিডিয়ার আদর্শগত পক্ষপাত’ প্রভৃতি নিয়ে আর্টিকেল আপনি উইকিপিডিয়াতেই পড়তে পারবেন। এবার ভাবুন যারা নিজেদের ওয়েবসাইটে নিজেদের সমালোচনামূলক লেখা প্রকাশ করতে পারে তারা অন্য আর্টিকেলগুলোর ক্ষেত্রে কতটা নিরপেক্ষতা অবলম্বনের চেষ্টা করে।

উইকিপিডিয়ার আরও একটি দিক হলো, আপনি সাইটটিতে যে তথ্য দেখতে পান তা অবদানকারীগণ নিজ থেকে মৌলিক গবেষণা করে লিখেননি। অর্থাৎ উইকিপিডিয়ার আর্টিকেলে যে তথ্য থাকে তা উইকিপিডিয়ার বাইরে নির্ভরযোগ্য কোন না কোন মাধ্যমে ইতোমধ্যে প্রকাশ হয়েছে। অবদানকারীরা একটি নির্দিষ্ট টপিকের তথ্য কোথায় কোথায় প্রকাশিত হয়েছে সেগুলো প্রথমে সংকলন করেন, তারপর সেই মাধ্যমের তথ্যসূত্র প্রদান করে সংকলিত আর্টিকেলটি প্রকাশ করেন।

এখানেও একটি উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে। ধরুন, একজন উল্লেখযোগ্য ব্যক্তির কাছ থেকে তথ্য নিয়ে আপনি তাঁর উইকিপিডিয়া আর্টিকেলটি সমৃদ্ধ করতে চান। উক্ত ব্যক্তি আপনাকে তাঁর নিজের সম্পর্কে এমন কিছু তথ্য দিলেন যা আগে কোথাও প্রকাশ হয়নি। সেক্ষেত্রে আপনি তথ্যগুলো উইকিপিডিয়াতে যুক্ত করতে পারবেন না, যদিও আপনি স্বয়ং যাঁর আর্টিকেল তাঁর কাছ থেকেই তথ্য নিয়েছেন।

অর্থাৎ সংবাদ মাধ্যমের মতো উইকিপিডিয়া নিজেরা গবেষণা করে বা মৌলক তথ্য সংগ্রহ করে তারপর একটি বিষয় নিয়ে লেখেন না। বরং একটি বিষয় নিয়ে একাধিক নির্ভরযোগ্য সংবাদ মাধ্যম অথবা অন্য উল্লেখযোগ্য মাধ্যম যে তথ্য প্রকাশ করেছে সেগুলো সংকলন করে প্রকাশ করে।

চলবে…